বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল আলম (৫০)। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই পদবী ব্যবহার করে ইতোমধ্যে অন্যের জায়গা-জমি জবর দখল করাই এখন তাঁর কাজ। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা মূল্যের মানুষের সম্পদ। সাধারণ মানুষের জমির পাশাপাশি ইবাদতখানার (মসজিদ) জায়গা দখল করার মতো স্পর্শকাতর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর জবর দখলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়নের হাজিরঘোনা ও সাকোরপাড় স্টেশনে এক অপরাধচক্র গড়ে তুলেছেন নুরুল আলম। তাঁর রয়েছে ৩০-৪০ জনের একটি দখলদার বাহিনী। যাদের কাজই হলো অন্যের ও সরকারি খাস জমি দখল করা। দখলবাজি, চাঁদাবাজি, হত্যার হুমকি, মারামারি ও চুরিসহ হাফ ডজনের উপরে মামলা রয়েছে তাঁর। এরমধ্যে মারামারি ও হত্যার হুমকির মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি।
স¤প্রতি সাকোরপাড় স্টেশনের এলাকার মোজাহের আহমদের ছেলে রুহুল আমিনের তিনটি দোকানঘর ও বসতভিটা দখলের চেষ্টা চালায় নুরুল আলম নেতৃত্বে থাকা দখলদার বাহিনী। গত ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর দুই দফায় বেইআইনীভাবে রুহুল আমিনের দোকানঘর ও বসতভিটায় অনুপ্রবেশ করে৷ এসময় রুহুলের পরিবারের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা চাঁদাও দাবি করে তাঁরা। এব্যাপারে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রুহুল আমিন বাদী হয়ে একটি চাঁদা দাবীর অভিযোগ এনে মামলাও করেন।
মামলার বাদী রুহুল আমিন বলেন, সাকোরপাড় স্টেশনের জায়গাগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের পুরনো জমি। সরকার রাস্তা প্রশস্তকরণের কারণে আমাদের তিনটি দোকানের অবকাঠামো ভেঙে যায়। এতে এগুলো সংস্কার করতে গেলেই বাধা দেয় নুরুল আলম বাহিনী। দাবী করে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
এদিকে সাকোরপাড় স্টেশনের মসজিদের জায়গা দখল করে সেখানে সেলুন ও কামারের দোকান বসিয়ে দিয়েছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সাকোরপাড় স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি হুসেইন মো. এরশাদ বলেন, আমাদের স্টেশনে দীর্ঘদিনের একটি ইবাদতখানা ছিলো। ৩৫ বছর ধরে স্টেশনের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা সেখানে প্রার্থনা করেছেন। গত কয়েক বছর আগে নুরুল আলম আওয়ামীলীগের পদ পেয়ে ইবাদতখানার জায়গাটি দখল করে নেন।
চার মাস আগে স্থানীয় আবু তাহের এর দীর্ঘ ৩০ বছরের দখলীয় দোকান জবর দখল করে এই জবর দখল বাহিনী। তা নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান। এছাড়া মাষ্টার রফিক উদ্দিন ও মিজবাহ উদ্দিনের ২০ বছরের দখলীয় দোকান নুরুল আলম তাঁর কব্জায় নিয়ে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, নুরুল আলম তাঁর দখলদার বাহিনী দিয়ে স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাকের জমি দখল করে পরে চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে তা ছেড়ে দেয়। হাজীরঘোনার জামাল হোসেন ও কামাল হোসেনের ১৬ একর জায়গা জবর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে সে। তাছাড়া বনবিভাগের রিজার্ভের জায়গাও তিনি দখলে নিয়েছেন। মানুষকে জিম্মি করে টাকা আত্মসাৎ করাও তাঁর নিয়মিত কাজ এখন।
জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন এই নুরুল আলম। পরে অডিটের মাধ্যমে তাঁর প্রতারণা প্রমাণ হলে আত্মসাৎ করা ছয় লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে টাকা ফেরত দেননি তিনি। এব্যাপারে পহরচাঁদা ফাজিল মাদ্রসার সাবেক অধ্যক্ষ আবু সায়ীদ আনসারী বলেন, অন্যের সনদ দিয়ে একযুগেরও বেশি সময় চাকরি করেছেন নুরুল আলম। এটি একটি জঘন্য অপরাধ। তাঁর প্রতারণা প্রমাণের পর বেতন বাবদ নেওয়া টাকাগুলো আত্মসাৎ বলে মনে করেছে অডিট কমিটি। যা ফেরত দেওয়ার কথা।
আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করে গত দশ বছরে নুরুল আলম শূণ্য থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আক্তার হোছাইন বলেন, নুরুল আলমের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মারধরের শিকার হতে হয়। পেতে হয় হত্যার হুমকি। আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ তাঁর পক্ষে অবস্থান নেয়। প্রশাসনকে চাপ দেয় যাতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়।
জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইফুদ্দীন খালেদ বলেন, ‘নুরুল আলমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগ অবগত নয়।’ নুরুল আলমকে দলীয়ভাবে শেল্টার দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কাউকে দখলবাজি ও চাঁদাবাজি করার লাইসেন্স দেয়নি। কেউ যদি দলের পদ ব্যবহার করে অপকর্ম করে থাকে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে নুরুল আলম বলেন, আমি কারও জায়গা দখল করিনি। যা দখল করেছি তা আমার দালিলিক সম্পত্তি। একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply